গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের অনুলেখক বা এককথায় রবিলিপিকর ছিলেন সুধীরচন্দ্র কর (১৯০৬-৭৭)। রবীন্দ্রজীবনীকারের মতে কবির ‘খাস মুন্সী’। আবার তাঁকে রবীন্দ্ররচনার ভাণ্ডারীও বলা যায়। রবিস্মৃতিমূলক ‘কবি-কথা’, রবীন্দ্রচেতনাপ্রবাহী ‘জনগণের রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধগ্রন্থ; মহাকাব্যিক ‘জনগণমন’ নাট্যগ্রন্থ, ‘চিত্রভানু’ কাব্যের রচয়িতা করবাবু ছিলেন আইন অমান্য আন্দোলনকারী, রবীন্দ্র পরিচয় সভার সংগঠক, সংস্কার সমিতির গ্রামসেবক। তবে রবীন্দ্রজীবনে ও সাহিত্যধারায় তাঁর প্রধানতম অবদান ছিল মহাগ্রন্থ ‘গীতবিতান’-এর সম্পাদন-সংকলন তথা এর কালানুক্রমিক-বর্ণানুক্রমিক সূচিনির্মাণে—অবশ্য নেপথ্য কারিগররূপেই। মহাকবির বিবিধ রচনা লভ্যার্থে স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদকবৃন্দের কাছে শান্তিনিকেতনের সূত্রধররূপে সুধীরবাবুই ছিলেন প্রধান ভরসাস্থল। এ হেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সুধীরচন্দ্র করের এটিই প্রথম জীবনী গ্রন্থ। তিনটি প্রবন্ধের প্রথমটিতে তাঁর সামগ্রিক জীবন উদ্ভাসিত হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে রয়েছে মহাকায় ‘গীতবিতান’ গ্রন্থনির্মাণের অন্দরের কথা, তৃতীয় প্রবন্ধটি ধারণ করে আছে—২০১৫ সালে সার্ধশতবর্ষকালে ‘প্রবাসী’-‘দ্য মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকাখ্যাত সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এবং সুধীর করের পারস্পরিক অপ্রকাশিত চিঠিপত্রের মাধ্যমে উঠে আসা অজানিত রবীন্দ্রকথা। ত্রয়ী প্রবন্ধভিত্তিক সমগ্র গ্রন্থটিই রচিত হয়েছে অপ্রকাশিত উৎস যেমন চিঠিপত্র-নথিকে নির্ভর করে। সততই এই গ্রন্থ হয়ে উঠেছে মৌলিকত্বের পাশাপাশি নূতনত্বের দাবিদার।ভক্তিমূলকতা পরিহারপূর্বক নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক তুল্যমূল্য বিচারে তাই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে বিশ্বরবি সহ তাঁর লিপিকরকেও।
