নব্বইয়ের গল্পের এটাই মুশকিল। এ চৌকাঠে আঠা লেগে থাকে। কোনওক্রমে পা তুলে তুলে এসেছ তো মুক্তি, আর পা ছুঁয়েছ তো আটকে গেছ। এই মেরুকরণ শুরু হয়ে গেলে দুদলের লড়াই হয় সামান্য। প্রথমদলের উত্তাল সত্তর, আশি। শতক বদল, মুখ বদল, বাড়ি বদল। দ্বিতীয়দলের হাইফেন জীবন। ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে একবার পেছনো, একবার এগোনো। দুটো ধাপের ভেতর মানুষ-গলা দূরত্বে বিটার-সুইট মেমোরিয়ানা। মনের ভেতর, মাথার ভেতর একটা মেটালিক সাউন্ড, টিনিটাস, হিন্দি ছবির গান, সুমন। আজহারউদ্দিনের কবজির মোচড়ে লেগের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া মৃত্যুচেতনাও তখন কী অদ্ভুত সুন্দর। ছিয়াশির স্বপ্ন নয়, বরং ইতলিয়া নব্বইয়ের কান্না দিয়ে একটা দশক শুরু হলে সেখানে হ্যাপি এন্ডিং কিভাবে আসবে? ফলে দুদলের লড়াইয়ে দ্বিতীয়দল চুপচাপ শান্ত মেনে নেবে, হেরে যাবে। তবু ওই যে, আঠা, আকর্ষণ – মুক্তি নেই। গোটা জীবন ভোগাবে। কাজের ভেতর, ব্যস্ততার ভেতর, লুপের ভেতর সেকেন্ডের জন্য হলেও ভোগাবে। আর এই দ্বিতীয়দলের সমস্যা হল, যাদের ভেতর সেই আঠা নেই, যারা পা তুলে তুলে এসেছিল, সেই প্রথমদলের সঙ্গে এই দলের বন্ধুত্ব হবে না একদম। আমৃত্যু দূরত্ব যন্ত্রণা দেবে। কথা ভাগ করতে না পারার খেদ গল্প বলাবে। পাতার পর পাতা চেনা, একই কিছু বৃত্তের, ঘটনার, মুখের মেলানকোলিয়া। মনে হবে, এই তো পড়লাম, আগের পাতায়, আগের লেখায়, কোথায়, মনে পড়ছে না। আর ঠিক এটাই দ্বিতীয়দলের ট্রাম্পকার্ড। এক মুহূর্ত না ভেবে সে বলবে, জীবনটাও কি এমন নয়! সমস্ত, প্রায় সমস্তকিছু আগেও হয়েছে, দেখেছি, শুনেছি, কোথায়, মনে করতে পারছি না! নাইনটিয়ানা সেসব দেজাভুর অনিঃশেষ প্রলাপ।
