সম্মুখে পশ্চাতে চেয়ে দেখি
সব ঠিক। সকল সার্থক।
বেদনার গভীরে আমার
জ্বলে এক চিন্ময় আলোক।
স্বামীজির এই পরম অভিসারী দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছিল জগতের সবকিছুর মধ্যে এক চিন্ময় আলোকের অম্বেষণে। শ্রীরামকৃষ্ণের ‘চৈতন্যের আলোক স্রোতে অবগাহন এবং শ্রীমার মাতৃত্বের স্নিগ্ধ সুধারস পান করে তিনি এক অখণ্ড জীবনবোধের পাঠ নিয়েছিলেন। সেই ধ্রুব এবং শাশ্বত ‘বোধ’কে জীবনে লাভ করতে হলে যে নির্দিষ্টপথে আত্ম-অনুশীলনের প্রয়োজন তারই একটি বিন্যস্ত রূপরেখা তৈরী করেছেন রুদ্রপ্রসাদ সিন্হা এই গ্রন্থে। “শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা’ বৈদিক ঋষিগণের এই দিব্য উচ্চারণ কে অমোঘ আয়ুধ রূপে গ্রহণ করে স্বামীজি চেয়েছিলেন মানবজীবনে দেবত্বের বিকাশ; যাতে চেতনার আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে সকল মানবসত্তা এক শাশ্বত অখণ্ড জীবনবোধে উত্তীর্ণ হবে। শতাব্দী অতিক্রম করে মানবসভ্যতা যখন সর্বগ্রাসী আধুনিকতায় বিপর্যস্ত, তখন অধ্যাত্ম চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে আত্মশক্তির উন্মেষের যথার্থ বিশ্লেষণ করেছেন রুদ্রপ্রসাদ।
ব্যক্তিত্বের বিকাশে মনসংযমের ভূমিকা নির্ধারিত হয়েছে সুস্পষ্ট ভাবে এই গ্রন্থে। নিরন্তর আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মউপলব্ধির মধ্য দিয়ে রুদ্রের অম্বেষণ অত্যন্ত প্রত্যয়ী।
প্রথমত স্বামীজির মহাজীবনকে সহজ ভাষায় মেলে ধরেছেন লেখক। শ্রীরামকৃষ্ণদেব এবং সারদা মায়ের সঙ্গে তাঁর সংযোগ, প্রবল আত্মশক্তিতে স্বদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা, রামকৃষ্ণ মিশন গঠন, সংক্ষিপ্ত জীবন অথচ শতাব্দীব্যাপী
তাঁর কর্মধারা অনুসারী ইতিবাচক সকল প্রয়াস মানবাত্মার উত্তরণ ঘটিয়েছে যেভাবে তার চিত্র রচনা করেছেন লেখক।
তার পরে পরেই স্বামীজিকে আমাদের জীবনে কেমনভাবে গ্রহণ করব তার ব্যবহারিক রূপরেখা গঠন করে রুদ্র অকাতরে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদীর দৃষ্টিভঙ্গীর উল্লেখ করেছেন। ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে লেখক এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন তা বর্তমান ছাত্র সমাজের কাছে সাদরে গৃহিত হবে-এই আমার বিশ্বাস।
স্বামীজির ভাবাদর্শের বাস্তব প্রতিফলনের উদাহরণ স্বরূপ বিভিন্ন কর্মোদ্যোগের মডেল তুলে ধরেছেন রুদ্রপ্রসাদ; যেগুলি বর্তমান জীবনযাত্রার প্রতিকূলতাকে জয় করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
“বেদান্ত’ যখন বন্ধু তোমার ও চল দ্বন্দ্বের পারে যাই-এই দুই পরিশিষ্টও সমানভাবে মূল্যবান। কারণ যে নির্দেশ ও মূল্যায়ণগুলি সংযোজিত হয়েছে এই পর্বে তা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জীবনবোধকে সঠিক ইতিবাচক পথে চালিত করবে। জীবনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে সকল প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে মানুষ হয়ে ওঠার সকল পথরেখা সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই মহতী প্রচেষ্টায়।
রুদ্র আমার ভ্রাতৃপ্রতিম, তার জীবনবোধে ‘Be and make’ সততই নিত হয়। আশা রাখি ভবিষ্যতে আরও মূল্যবান আলোচনা তার রচনা শৈলীতে উঠে আসবে।
দিব্যত্রয়ীর আশীর্বাদ ও ভালোবাসা তার উপর বর্ষিত হোক।
মানস বন্দ্যোপাধ্যায়